Tuesday, September 10, 2013

তেরো নাম্বার বেঞ্চ — শেখ আবদুল হাকিম





মেয়েটির মধ্যে জরুরি তাগিদ এবং আন্তরিকতা আছে, কিন্তু ছেলেটি দ্বিধায় ভুগছে। এ রকম পরিস্থিতিতে সম্ভাব্য সবকিছু ঘটতে পারে। হয়তো আর দশজনের বেলায় যা ঘটে তাই ঘটবে, কিংবা ওরা লোক হাসাবে, অথবা নিজেরা হাসাহাসি করবে। তা না হলে করুণ একটা কিছু জন্ম নেবে_ নির্ভর করে মেয়েটির মন-মেজাজ আর অভিজ্ঞতার ওপর। আলোচ্য দৃষ্টান্তে ফলাফল হিসেবে বেরিয়ে এলো একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট। সেটা ওরা দু'জনেই রক্ষা করল।
ময়ূর সিরাজি তিনটে জিনিস নিয়ে প্যারিসে এসেছে :মহৎ একটা লক্ষ্য, ওকে অনেক বড় শিল্পী হতে হবে; রঙ সম্পর্কে নিজস্ব থিয়োরি; এবং এক মেয়েকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তার বাবার কাছ থেকে বিশ লাখ টাকা। প্যারিস এর সবটা নিয়ে দারুণ-নিদারুণ সব রকম খেলাই খেলে। দেশে যে সুন্দর মেয়েটির সঙ্গে ওর এনগেজমেন্ট হয়ে আছে, তার বিশ্বাস সিরাজির নিয়তি বড় একজন শিল্পী হওয়া। কারিগরি ফলানো এই বিশ্বাস বা মতিভ্রম শেয়ার করে ছেলেটিও।
বিপুল আগ্রহ নিয়ে প্যারিস শিল্পকলার ছাত্রজীবনে ঢুকে পড়ল সিরাজি, তবে ওকে যেসব অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে, প্রত্যাশার সঙ্গে সেগুলোর মিল থাকছে না। বই আর পত্রিকায় চোখ সেঁটে, কবিতা আর প্রবন্ধ গিলে, এবং ইন্টারনেট ঘুঁটে জানতে পেরেছিল শেইন নদীর বাঁ এবং দক্ষিণ তীরে বিরাট বিরাট ভার্সিটি আছে। ছাত্র আর শিল্পীরা সেখানে শুধু আলো ছড়ায়, বিশেষ করে মেধাবী ছাত্র আর শিল্পীদের মাথার চারপাশে স্বর্গীয় আলোর বলয় দেখতে পাওয়া যায়। মানে যদি তোমার দেখার চোখ থাকে আর কি। ওই জায়গার নাম, সেই মধ্যযুগ থেকে, ল্যাটিন কোয়ার্টার। কিন্তু ওকে হতাশ হতে হলো। কারণ ল্যাটিন কোয়ার্টারে সবই আছে, শুধু ওই আলো বাদে। রোমান্স বেশুমার, কিন্তু খুব বেশি সস্তা, নোংরাও কম নয়, এবং পুরো ব্যাপারটা টাকা ছড়ানো আর তা কুড়িয়ে নেয়ার প্রতিযোগিতা মাত্র।

Tuesday, June 25, 2013

তদন্তের খসড়া - মা সু দ আ নো য়া র



পুরো ব্যাপারটা যেভাবে ঘটা উচিত, সাকিব আর শ্যামলীর বেলায় তা-ই ঘটেছিল। শ্যামলী একটি বহুজাতিক কোম্পানির এক্সিকিউটিভ; সাকিব অল্প বয়সেই নামকরা একটি দৈনিকের ডাকসাইটে বার্তা সম্পাদক। সুতরাং মাস ছয়েকের চুটিয়ে প্রেমের পরিণতি পরিণয়ে গিয়ে ঠেকতে বাধেনি কোথাও।
মোটামুটি ধুমধামের মধ্য দিয়েই দুই পক্ষের অভিভাবকদের সম্মতিতে বিয়ে হয়েছে তাঁদের। মধুচন্দ্রিমা কাটাতে হনলুলু কিংবা সিঙ্গাপুরে যাওয়ার মতো আর্থিক সংগতি দুজনেরই ছিল। কিন্তু ওসব জায়গায় না গিয়ে এক মাসের ছুটিতে রাঙামাটিতে গিয়েছিলেন তাঁরা। বন্ধুদের প্রশ্নকক্সবাজারের বদলে রাঙামাটিতে কেন? দুজনেরই জবাব, নীল পাহাড়ের নিবিড় রহস্য যেমন, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কও তেমন হওয়া উচিত। বন্ধুরা এর বেশি আর ঘাঁটায়নি।

Friday, May 3, 2013

কঠিন অসুখ - শেখ আবদুল হাকিম

ডাক্তার আমাকে কিছু বলেননি, বলেছেন ভাইকে। ভাই তাতে রঙ-টঙ চড়িয়ে আমাকে জানিয়েছে এটা আমার খুব খারাপ অসুখ। শতকরা নব্বই ভাগ আশঙ্কা আমি পাগল হয়ে যাব। আচ্ছা, শুনলে ভয় লাগে, গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায়, এ রকম দুঃস্বপ্ন দেখাটা কি সত্যি খুব কঠিন অসুখ? কার কাছে যাব আমি? এ দুনিয়ায় কাকে বিশ্বাস করা যায়! কথাটা বলার সময় দাঁত বের করে হাসছিল সে। এই ভাই পারলে আমাকে খুন করে পৈতৃক সম্পত্তি মেরে দেয়, কাজেই ঠিক করেছি একদিন একাই ডাক্তারের গলা টিপে দিয়ে আসব।

Thursday, October 20, 2011

খুনখারাবি - কাজী আনোয়ার হোসেন


ঝকঝকে প্রিমিও কড়া ব্রেক করল। রাস্তার কিনারায় থেমে দাঁড়িয়ে দুলছে, এমনি সময়ে জানালার পাশে এসে দাঁড়াল দুই তরুণ, হাতে বই। দু জনেই ধোপদুরস্ত, রুচিসম্মত পোশাক পরা, বয়স সতেরো কি আঠারো।

একটা লিফট চাইছিলাম, স্যর, শক্তপোক্ত চেহারার ছেলেটা বলল বিনীত ভঙ্গিতে।
কোথায় যাবে? প্রশ্ন করল চালক। টাইটা একটু আলগা করল বাম হাতে। কতদূর?
গাজিপুরের দিকে, স্যর। পিকনিক স্পটে। স্কুল-পিকনিক। আমরা স্কুলে গিয়ে দেখি বাস চলে গেছে আগেই। আমাদের সামনে কোথাও নামিয়ে দিলেই হবে।
কোন স্কুলে পড়ো তোমরা?
গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলে।

Thursday, February 10, 2011

কথা - প্রচেত গুপ্ত

র্কর বাঁ দিকের বুকের কাছটা কেঁপে উঠল। প্রথমে অল্প,তারপর মাঝারি ধরনের দুবার ঝাঁকুনি দিয়ে থমকে দাঁড়ালো। অর্ক বুকে হাত দিয়ে মুখ তুলে তাকালো। কেউ বুঝতে পারেনি তো? পারলে সর্বনাশ। তবে মনে হয় না পেরেছে। সারি সারি টেবিলে কাজ চলছে নিঃশব্দে।
ছাব্বিশ বছরের তরতাজা যুবকের বুক কাঁপা ভালো লক্ষণ নয়। দুশ্চিন্তা হয়। হার্টের কিছু হলো না তো? তবে অর্কর দুশ্চিন্তা হলো না, তার হলো বিরক্তি। বিরক্তিতে তার ভুরু দুটো কুঁচকে গেল। কারণ,এই কম্পন হার্টের নয়,কম্পন তার মোবাইল ফোনের। শার্টের পকেটে ফোন রাখা আছে ভাইব্রেট মোডে। ফোন এলে আওয়াজ হয় না, শুধু কাঁপে। এই সময় কেঁপে ওঠার অর্থ উৎসা তাকে ফোন করছে। এখন এক বার করে থেমেছে, উত্তর না দিলে বার বার করতে থাকবে। এটাই তার স্বভাব। জবাব না পাওয়া পর্যন্ত ঘন ঘন ফোন করে। মনে হয়, বড় ধরনের কোনও বিপদে পড়েছে।

Wednesday, November 3, 2010

শিশিরের জল - সমরেশ মজুমদার

মদম এয়ারপোর্ট থেকে বেরোবার আগে তার পাসপোর্ট দেখে বাঙালি ইমিগ্রেশন অফিসার হেসে বললেন, আপনি অষ্ট্রেলিয়ান?
হ্যাঁ। পাসপোর্টই বলছে আমি অষ্ট্রেলিয়ার নাগরিক।
বহু দিন পরে এলেন! ভাল থাকুন। পাসপোর্টে স্ট্যাম্প মেরে ভদ্রলোক সেটা ফেরত দিলেন। কাস্টমসেও কোনও অসুবিধে হল না। স্যুটকেস নিয়ে প্রি-পেড ট্যাক্সির টিকিট কেটে সে যখন বাইরে এল, তখন রাতের অন্ধকার গাঢ় হয়েছে। ড্রাইভার কাগজ দেখে জিজ্ঞাসা করল, পার্ক ষ্ট্রিটের কোথায় যাবেন স্যর? পার্ক হোটেলে?

Saturday, October 30, 2010

বা ড়ি ফে রা - সে লি না হো সে ন

পায়ের ঘা শুকোয় না কেন এ নিয়ে আছিরুদ্দীন তেমন চিন্তিত নয়। ও গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষ, পায়ের ঘা নিয়ে ভাবনা-চিন্তার সময় কোথায়? ভেবেছে আস্তে আস্তে শুকিয়ে যাবে। ছোটখাটো এমন কত কিছুই তো হয়। কিন্তু না, দিন গড়ায় কিন্তু ঘা শুকোয় না। একদিন আছিরুদ্দীন জায়গাটা চেপেচুপে দেখে ভড়কে যায়। বেশ টুপটুপে হয়েছে। রস ঝরছে। হঠাৎ মনে হয় ছোট্ট একটা পোকার মতো কিছু একটা হেঁটে বেড়াচ্ছে। ভয়ে আছিরুদ্দীনের বুক শুকিয়ে যায়। এ বড় অন্যায়। খেটে খাওয়া মানুষ বলে ঘায়ে পোকা হয়ে যেতে হবে? ও বাড়ির কাউকে কিছু বলে না।
 
কিন্তু বাদ সাধল বড় মেয়ে মেঘলা। আঠার বছর বয়স। ব্র্যাক স্কুলে পড়ে। উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা। আছিরুদ্দীনের ধারণা, এই পড়ালেখার ফলে মেয়েটির যথেষ্ট জ্ঞানগম্যি হয়েছে। ও সরাসরি বলে, আব্বা এটা খুব খারাপ অসুখ।

Saturday, August 28, 2010

র ক ফে স্টি ভা ল - প্র চে ত গু প্ত

বামাচরণ কবিরাজ লেনে জরুরি মিটিং বসেছে। মিটিং-এ গলির বড়, মেজ, ছোট তিন প্রজন্মই হাজির। কত বছর পরে যে সকলে একসঙ্গে বসল, কেউ মনে করতে পারছে না। যদিও আলোচনা মোটেই শান্তিপূর্ণ হচ্ছে না। যত সময় যাচ্ছে, মিটিং তত উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। উত্তপ্ত হয়ে ওঠারই কথা। ষোলো থেকে ছাব্বিশের স্লট অতি আশ্চর্য এবং উদ্ভট এক প্রস্তাব নিয়ে এসেছে। গলির বড় এবং মেজ প্রজন্ম সেই প্রস্তাব শুনে আকাশ থেকে পড়েছে। এমনটা আবার হয় নাকি! হয়েছে কখনও? ষোলো থেকে বাইশের দল বলছে, না হয়নি। এটাই প্রথম হবে। বয়স্করা বলছে অসম্ভব। অর্থহীন। পাগলামি। ষোলো থেকে বাইশ বলছে, আমরা পাগলামিই করব। পাগলামি করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেব।
সত্যি পাগলামি। বামাচরণ কবিরাজ লেনের ছেলেমেয়ের দল ঠিক করেছে, এই বসন্তে তারা...।

Saturday, May 29, 2010

জনারণ্যে এক ফোঁটা ভালবাসা - মঞ্জু সরকার

জুম্মনের মা যে তার অবাঞ্ছিত গর্ভের দায় চাপানোর জন্য গোঁয়ার স্বামী ও জুম্মনসহ গোটা বিচারক সমাজকে আমার বাসায় পাঠিয়ে দেবে, ভুলেও ভাবিনি কখনো। এমন নাটকের নায়ক হওয়া দূরের কথা, দেখার জন্য বিন্দুমাত্র প্রস্তুত ছিলাম না আমি। নিরীহ ভদ্রলোক বলে সুনাম আছে। আবার বিয়েথা না করে এখনো একা আছি বলে আড়ালে হয়তো অনেকে বাদনাম গায়। কিন্তু তাই বলে লম্পট বদমাশ ভাবে না কেউ। কোনো মেয়ে এমন গাল দেয়নি, এমনকি স্বপ্নে-কল্পনায় যে সকল সুন্দরীকে উলঙ্গ করে যাচ্ছেতাই করেছি, তারাও লম্পট বলেনি। আর জুম্মনের মায়ের সঙ্গে আমার নির্জন ফ্ল্যাটে বছরখানেকের যে প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ক, তা যতই অন্তরঙ্গ হোক, সেখানে বাস্তবে এমন কোনো মুহূর্ত এসেছিল কি, যখন মেয়েটির চোখ থেকে ছি-এর আগুন ঝিলিক দিয়েছিল? মনে পড়ে না। মেয়েটির সঙ্গে তো আমার সকল সম্পর্ক চুকেবুকেই গেছে। তাই একদিন সকালে দরজা খুলেই ছয়জন মানুষের ভিড়ে ৪/৫ বছরের জুম্মনকে দেখে চমকে উঠি।
জুম্মনের বাপকে আগে দেখিনি কখনো, চিনিও না। ভিড়ের মধ্যে একমাত্র চেনা মুখ আমাদের বিল্ডিং-এর সহভাড়াটিয়া, সিঁড়ি ভেঙে নিচে নামার সময় যাকে কয়েকবার দেখেছি, সালাম দিলে লোকটা গায়ে পড়ে দুএকবার কথা বলার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু পাত্তা পায়নি। অচেনা আগন্তুকদের সঙ্গে এই পড়শী নাকি চেনা জুম্মনকে দেখেই কি না, ঠিক জানি না, অজানা আশঙ্কায় আমার বুক একটুখানি কেঁপেও ওঠে।

Friday, May 28, 2010

পরণকথার পাখি - আবুল বাশার

রাখালভোগায় একটি পাখি। রাখালদের ঠকায় কিংবা ভোগান্তিতে ফেলে বলে লোকে পাখিটার ওই রকম নাম দিয়েছে। কিন্তু রাখালভোগায় শুধু যে রাখালদের ভোগান্তি করে তা তো নয়। সে গেরস্তকে হোড়কো দেয়, ঘরের বউঝিকে পাকে ফেলে মজা পায়। তার রকম-সকম অদ্ভুত। পাখিটা দেখতে অনেকটা বাজপাখি ধরনের। তবে মোটেই সে শিকারি পাখি নয়। ওর বিচার-আচ্চা আলাদা।

রাখালভোগায় তেমন কিছু রূপবান কিংবা রূপসী পাখি না হলেও, ওর ঠকম-ঠাট, কেতা-কায়দাদুরস্ত, মানুষকে মজানোর তার শৈলী আছে, তার চঞ্চলতা আছে, গায়ে-পড়া ভাব আছে, ‘ওরে বউ খেলতে আয়’- এমন একটা বার্তাও সে দেয়, তবে সবই ভঙ্গিমে করে, আড়ে আড়ে। সব জেনেও মানুষ তার ফাঁদে পড়ে।

এক রাখালভোগায় সাত রাখালকে ঘোল খাওয়াতে পারে- এমন জনশ্র“তি লোকালয়ে এলে পাবেন। কিন্তু এ গল্প রাখালকে নিয়ে নয়। আখ্যানটি এক সুন্দরী বউকে নিয়ে।