Sunday, January 31, 2010

বিষবৃক্ষ - শেখ আবদুল হাকিম

সুষমার দেহসৌষ্ঠব, তার সঙ্গে যদি ওটা সম্পর্কে তার সচেতনতাকেও ধরা হয়, ধরা হয় কামুকী মেয়েটার চোখে ফুঠে ওঠা কাতর আমন্ত্রণ, তাহলে ওর উপস্থিতির সঙ্গে একমাত্র তুলনা চলে হাড্ডি-মাংস মিলিয়ে আধমণটাক মাংসের, তিন দিন অভুক্ত একটা কুকুরের সামনে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। শেকল দিয়ে বাঁধা, কুকুরটা তাই ওই মাংসের নাগাল পাচ্ছে না।
আজাদকে কেউ বেঁধে রাখেনি। প্রায় দরবেশতুল্য সংযমের পরিচয় দিয়ে ওদের হোটেলসংলগ্ন কটেজের সিটিংরুমে পায়চারি করে নির্ধারিত দুই ঘণ্টা পার করে দিচ্ছে ও, সুষমার দিকে ভালো করে একবার তাকাচ্ছেও না।
সুষমাকে যা বলার কটেজে ঢুকেই বলে দিয়েছে আজাদ, ‘জরুরি একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট রক্ষার জন্য রাত বারোটা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে আমাকে। প্লিজ, তার আগে আমাকে বিরক্ত কোরো না। ভদ্রলোক এলে তুমি কয়েক মিনিটের জন্য পাশের কামরায় চলে যেয়ো।’



আজাদ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ প্রায় কিছুই জানে না মেয়েটা, তবে অনেকটাই আন্দাজ করে নিতে পারে। ওর ভালো লাগা এই পুরুষটিকে ঘিরে রহস্যঘন যে আবহ তৈরি হয়েছে, সুষমা সেটা উপভোগ করে, কাজেই প্রসঙ্গটা নিয়ে কোনো প্রশ্ন করেনি। এখানেই অন্য কোনো মেয়ের সঙ্গে ওর পার্থক্য।


ডিনারটা ওরা অর্ডার দিয়ে আনিয়ে কটেজেই খেয়ে নিয়েছে।
সেই চিন্তাটা এখনো অস্থির করে রেখেছে আজাদকে, মারাত্মক বিপদটা কী হতে পারে। আল-কায়েদাকে নিয়ে আইএসআই নিজেই যেখানে খাবি খাচ্ছে, তারা আবার বাংলাদেশের কী ক্ষতি করবে?
আবার এও ঠিক যে পরিষ্কার কিছু না জেনে রিপোর্ট করার ছেলে দিলশাদ অন্তত নয়। কিন্তু কোথায় ও? সময়সীমা তো পার হয়ে যাচ্ছে। রাত বারোটা বাজতে আর মাত্র পাঁচ মিনিট বাকি। আর কখন আসবে?
ধরা পড়ে গেছে? মরা একটা লাশ?
নির্দিষ্ট সময় পার না হলে আজাদ ওর সঙ্গে যোগাযোগও করতে পারছে না। কী অবস্থায় আছে জানা নেই, এই মুহূর্তে হয়তো ফোন রিসিভ করতে পারবে না দিলশাদ। একটা রিং ওকে হয়তো বিপদে ফেলে দেবে।
কষ্টকর শেষ মিনিটটাও পার হলো।
বই থেকে মুখ তুলে তাকাল সুষমা।
পায়চারি থামিয়ে কামরার মাঝখানে স্থির হয়ে আছে আজাদ। থমথম করছে চেহারা, একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে শূন্য দেয়ালের দিকে।
নির্দিষ্ট সময় নিষ্ফল পার হওয়ার পর একান্ত উচিত স্থান ত্যাগ করে নিরাপদ কোথাও সরে যাওয়া। কিন্তু আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে চাইছে আজাদ, একা।
‘শোনো,’ সুষমাকে বলল ও, ‘আমার ব্রিফকেস আর তোমার সুটকেস নিয়ে এখুনি সৈকতে চলে যাও তুমি।’
খসখসে গলায় সুষমা বলল, ‘মাঝরাতে...অন্ধকারে আমি একা...’
অবশেষে অপেক্ষার অবসান হয়েছে বুঝতে পেরে আশ্চর্য একটা আবেশে অবশ হয়ে আসছে তার নধর শরীর।
‘দশ মিনিট পরই আসছি আমি,’ আশ্বস্ত করল আজাদ।
‘কিন্তু সৈকতে তুমি আমাকে খুঁজে পাবে কীভাবে?’ জিজ্ঞেস করল সুষমা। ‘ওখানে তো রাজ্যের বোল্ডার...’
‘তুমিই আমাকে খুঁজে পাবে। যদি দেখো, পানি থেকে কেউ উঠে আসছে; বুঝবে, ওই লোকটাই আমি,’ বলে হাত নেড়ে সুষমাকে কামরা থেকে বেরোতে বলল আজাদ।
এক মিনিট পর সুষমার পায়ের শব্দ দূরে মিলিয়ে যেতে দরজা বন্ধ করল আজাদ, তারপর পকেট থেকে মোবাইল ফোনটা বের করে দিলশাদের নম্বর টিপল। একবার নয়, কয়েকবার। অ্যানসারিং মেশিনের যান্ত্রিক স্বর প্রতিবারই জানাল, সেটটা বন্ধ।
রাত দুটো। নির্ধারিত সময়ের পর দুই ঘণ্টা পার হয়ে গেছে।
...এখন পর্যন্ত নিজেদের পাতায়া বিচ রিসোর্টের সবচেয়ে সুখী প্রেমিক-প্রেমিকা বলে ভাবতে পারে ওরা, এই অর্থে যে সময়টা নিজেদের মতো করে দুজনেই দারুণ উপভোগ করছে। সুষমা ওর নিরাবরণ শরীরটা আজাদের আরও কাছে সরিয়ে আনল, আদৌ যদি তা সম্ভব হয়, কানের লতিতে ঠোঁট ঠেকিয়ে এত নরম আর এত গাঢ় সুরে ফিসফিস করল, যেন ওদের ঘিরে থাকা অন্ধকার ভারত মহাসাগরের নিজস্ব স্বর ওটা।
নরম পশমি চাদরে শুয়ে আছে দুজন। আদিম একটা ছবি: নারীর পিঠ মাটির দিকে, পুরুষের আকাশের দিকে।
এটা এই মুহূর্তের ছবি, খানিক আগে উল্টো দেখাচ্ছিল।
আবার বিড়বিড় করল সুষমা। কিন্তু এবার আজাদের মনোযোগ স্প্রিংয়ের মতো লাফ দিয়ে অস্পষ্ট একটা আওয়াজের দিকে ছুটে গেল—বালি ঢাকা বড় কোনো পাথরের ওপর, অর্থাত্ বোল্ডারে কিছু একটা ঘষা খেয়েছে।
সুষমার মুখে হাত চাপা দিল আজাদ, হাতের তালুতে ওর ঠোঁটের ভেজা ভাব অনুভব করল, তারপর কোমল নারীদেহের ওপর থেকে আধ গড়ান দিয়ে নেমে এল চাদরের কিনারায়।
অনেক কারণেই মানুষের কাম ভাব হঠাত্ অদম্য হয়ে উঠতে পারে—খুনিদের নাকি খুন করার পর এ রকম হয়, কারও কারও হয় বড় ধরনের কোনো সুখবরে, আজাদের বেলায় কানাগলিতে আটকা পড়লে।
দিলশাদ অ্যাপয়েন্টমেন্ট মিস করেছে, ওর সঙ্গে যোগাযোগ করার আর কোনো উপায় নেই—অন্তত এখনই নয়—তাই জানাও যাচ্ছে না বাংলাদেশের জন্য কী বিপদ অপেক্ষা করছে। কাজেই মনে হচ্ছে, কানা একটা গলিতে আটকে ফেলা হয়েছে ওকে।
তবে সেখান থেকে বেরোনোর একটা পথ বোধহয় কাছেপিঠে কোথাও তৈরি হচ্ছে।
ছোট্ট এই সৈকতটা খাড়া পাহাড়-প্রাচীর যেখান থেকে শুরু হয়েছে তার পাশেই; এতটাই নির্জন আর নিরিবিলি যে নিজেদের জন্য আলাদা একটা জগত্ তৈরি করলেও উঁকি দিয়ে দেখতে আসবে না কেউ।
সুষমাকে এখানে নিয়ে আসার পর দিগম্বর সেজে সাগরের বুকে অনেকটা দূর পর্যন্ত সাঁতরেছে দুজন। ফেরার পথে ক্লান্ত হয়ে পড়ায় আজাদের পিঠে চড়ে সওয়ার হতে হয়েছিল সুষমাকে।
খাড়া পাহাড়-প্রাচীরের তলার দিকে সারি সারি অনেক গুহা আছে, জোয়ারের সময় পানিতে ভরে যায়। সুষমা বলছিল, পর্যটকেরা লঞ্চ নিয়ে ওই সব গুহার ভেতরও নাকি ঢুকে পড়ে।
শব্দটা আবার শুনল আজাদ। পাথরের গায়ে লেগে কিছু একটা পিছলে বা হড়কে যাওয়ার আওয়াজ।
হঠাত্ করে, এক মুহূর্তে, বদলে গেছে গোটা পরিবেশ। যে শব্দটা আজাদ শুনেছে তা শুধু পাথরের গায়ে শুকনো চামড়া পিছলে গেলে তৈরি হতে পারে—এবং এত রাতে এ রকম চোরা পদক্ষেপের একটাই অর্থ: বিপদ।
বিপদ আরও মারাত্মক হয়ে উঠল পাহাড়ের আড়াল থেকে আধ ক্ষওয়া চাঁদটা বেরিয়ে আসায়, গায়ে ওটার ম্লান আলো লাগায় গাঢ় ছায়া তৈরি করছে বেঢপ বোল্ডারগুলো।
দাঁড়িয়েছে আজাদ, তবে সুষমার দিকে যতটা সম্ভব ঝুঁকে আছে, অতৃপ্ত নারী যাতে দেখতে পায় নিজের ঠোঁটে তর্জনী ঠেকিয়ে রেখেছে ও। ওর চোখ লক্ষ্য করে প্রশ্ন করছে সুষমার চোখ, তবে সে কোনো আওয়াজ করছে না।
জ্যাকেট আর ট্রাউজারের স্তূপে হাত গলিয়ে পিস্তল বের করল আজাদ। অপর হাতে আগেই চলে এসেছে ছুরিটা, স্ট্র্যাপের সঙ্গে সেটাকে বগলের নিচে আটকাল।
এরপর সুটকেস থেকে স্যান্ডেল বের করে পরতে হবে ওকেও, কারণ এদিকের বালুতে এত বেশি ধারাল কাঁকর, খালি পায়ে ছোটাছুটি করতে হলে চামড়া কেটে রক্তাক্ত ক্ষত তৈরি হবে।
তবে আজাদ জানে যে শুধু খালি পায়েই এ রকম পাথরবহুল বালুর ওপর নিঃশব্দে হাঁটা যায়, কাজেই পিছু নেওয়া লোকটার মতো ভুল করা উচিত হবে না ওর।
জুতো জোড়া চাদরের ভাঁজে ঢুকিয়ে রেখে, এখনো দিগম্বর, পাশের বড় বোল্ডারটার গাঢ় ছায়া লক্ষ করে এগোল আজাদ। পেছনের অন্ধকারে সুষমাকে আধশোয়া অবস্থায় রেখে যাচ্ছে, তবে বড় আকৃতির কয়েকটা পাথর দেখিয়ে ওগুলোর আড়ালে আশ্রয় নিতে ইঙ্গিত করল তাকে।
চাঁদের আলোয় নগ্ন নারীদেহ চকচক করছে, আজাদের নির্দেশ বিনা প্রশ্নে পালন করছে সুষমা।
তারাই আসুক ওর কাছে। ও তৈরি। আড়াল নেওয়ার পর নিঃশব্দে অপেক্ষা করছে আজাদ।
সময় বইছে, অথচ কিছু ঘটছে না। কয়েক মিনিট পার হলো। তারপর আজাদ দেখতে পেল ওটাকে।
অনেক দূরে, কালো পানিতে আরও কালো একটা ছায়া, আকাশের গায়ে শুধু ভোঁতা আকৃতির তেকোনা বো দেখা যাচ্ছে, জোয়ারের ফুলে ওঠা পানিতে সাগর থেকে চলে আসছে ইনলেটের দিকে—সাগরের একটা সরু আঙুলে।
বোধহয় কোনো গুহার ভেতর ঢোকার জন্য এগোচ্ছে যান্ত্রিক নৌকোটা। বাতাস নেই, তার ওপর সাইলেন্সার লাগানো থাকায় ইঞ্জিনের ভট ভট আওয়াজটা কান পাতলেই শুধু একবার একটু শোনা গেল। গতি এত ধীর, ঢেউ প্রায় উঠছে না বললেই হয়।
এদিকে এ-ধরনের চওড়া পাল তোলা ছোট আকৃতির মাছ ধরার জলযান অহরহ দেখতে পাওয়া যায়, ট্যুরিস্টদের নিয়ে নিশুতি রাতে রোমাঞ্চকর ভ্রমণে বেরোয় ওগুলো, সঙ্গে মাছ ধরার রড আর হুইল যেমন থাকে, তেমনি থাকে কড়া পানীয়ের বোতল আর বিপরীত লিঙ্গ—দুঃসাহসী নারী।
ঘষা খাওয়ার আওয়াজটা আবারও শুনতে পেল আজাদ, এটা নিয়ে তৃতীয়বার। তবে আগের চেয়ে অস্পষ্ট এবার, ভেসে এল সরু ইনলেটের ওপার থেকে। মানুষ দেখা যাচ্ছে একজন নয়।
বোল্ডারটার ছায়ায় কুঁজো হয়ে আছে আজাদ, অপেক্ষা করছে। ভাবছে, কে বা কারা অ্যামবুশ পাতল ওর জন্য। কেন।
মাছ ধরার নৌকো থেকে ঝিকিয়ে ওঠা আলোর সংকেত এত ক্ষীণ, নিশ্চয়ই কেউ পেননাইফ ব্যবহার করছে। দুবার জ্বলে উঠে নিভে গেল সেটা, তারপর আরেক দফা দ্রুতবেগে তিনবার জ্বলে নিভল।
ঘাড়টা বাঁকা করে পেছন দিকের অন্ধকার পাহাড়-প্রাচীরের মাথায় চোখ বোলাচ্ছে আজাদ। ওর ধারণাই ঠিক, পাল্টা আলো জ্বেলে সংকেতের জবাব দিল কেউ।
পায়ের খসখসে আওয়াজ এখন স্পষ্ট। এখন আর ওগুলো গোপন কিছু নয়। কেউ যেন পাহাড়-প্রাচীরের ঢালু গা বেয়ে হুড়মুড় করে নেমে আসছে, আজাদের নাগাল পাওয়ার জন্য ব্যাকুল।
তিনটে অবস্থানে রয়েছে লোকগুলো। বোটে, পাহাড়ে এবং ওগুলোর মাঝখানে এই সৈকতে।
দিলশাদের কথা ভোলেনি আজাদ; ভাবছে, পেছনে ফেউ লাগায় পৌঁছাতে দেরি করে ফেলেছে? ওর সঙ্গে সদ্য তীরে কাছে পৌঁছানো যান্ত্রিক নৌকোর কোনো সম্পর্ক নেই?
ধরা যাক, লোকটা দিলশাদ নয়, তবু যতক্ষণ না টার্গেটের মধ্যে পাচ্ছে ততক্ষণ গুলি করতে রাজি নয় আজাদ। কিন্তু হঠাত্ করে টার্গেট ওকে পাশ কাটাল, তীরবেগে পৌঁছে যাচ্ছে ইনলেটের নিস্তরঙ্গ পানির কিনারায়। লোকটার জটা পাকানো চুল এক গোছা সরু সাপের মতো ঝাঁকি খাচ্ছে পিঠের ওপর, লম্বা দাড়ি নাভি ছুঁতে চাইছে, হাতে একটা লাঠি, কাঁধ থেকে ঝুলছে কাপড়ের একটা লম্বাটে ব্যাগ। হিন্দু সন্ন্যাসী বা মন্দিরে আশ্রয় পাওয়া ভিক্ষুক বলে মনে হলো আজাদের। পাতায়ায় হিন্দুদের বেশ কটা মন্দির আছে বটে, কিন্তু এত রাতে...এখানে...?
তিনটে লম্বা লাফ দিয়ে পানিতে পড়ল সন্ন্যাসী, আর ঠিক এই সময় ফায়ার ওপেন হলো।
ইনলেটের ওপারে, পাহাড়চূড়ায় রয়েছে যে লোকটা, বিশেষ সুবিধে করতে পারছে না সে। অতটা উঁচু থেকে, অটোমেটিক রাইফেলে স্নাইপারস্কোপ থাকলেও, নিখুঁত দৃষ্টিকোণ পাওয়া কঠিন।
আজাদের পেছনে, পাহাড়ি ঢালের মাঝামাঝি উচ্চতায় রয়েছে যে লোকটা, লক্ষ্যভেদে অনেক ভালো সে। কালাশনিকফ অটোমেটিক রাইফেল যে কাশিটা দেয়, তার মধ্যে এমন অদ্বিতীয় একটা তোতলানোর ভাব আছে, কাছাকাছি থেকে একবার শুনলে জীবনে আপনি কখনো আর ভুলতে পারবেন না।
আজাদ যে শব্দটা কতবার শুনেছে, গুণে শেষ করা যাবে না। ওই রুশ অটোমেটিক দুনিয়ার অন্যতম সেরা রাইফেল। এটা লজ্জারই কথা বটে, যে-লোক ওটা ব্যবহার করছে, দক্ষতার দিক থেকে সে অতটা সেরা নয়। সিলেক্টরটা স্রেফ ‘অটো’-য় ঠেলে দিয়ে ট্রিগার টেনে রেখেছে।
খুদে কয়েকটা কৃত্রিম ঝরনার মতো লাফ দিয়ে উঠল পানির কিনারা। ওই একই মুহূর্তে, সাঁতরে ইনলেট থেকে সাগরে পড়তে যাওয়া সন্ন্যাসী ঝট করে খেয়ে খাড়া হয়ে গেল, ঝাঁকি খেল দু-একবার, তারপর মাথা নামিয়ে পানিতে হাত-পা ছুড়তে শুরু করল।
আজাদের পেছনে থেমে গেছে কালাশনিকফ। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে পুরো একটা ক্লিপ ভরে ফেলবে লোকটা। কল্পনার চোখে আজাদ দেখতে পেল, দুটো হাত ব্যস্ততার সঙ্গে বাতিল ম্যাগাজিন ফেলে দিয়ে তার জায়গায় নতুন একটা ভরছে।
লোকটার ভিকটিম এখনো বেঁচে আছে। তীরে ফিরে আসার চেষ্টায় অনবরত হাত-পা ছুড়ে পানি ছিটাচ্ছে চারদিকে। ডাঙায় উঠে আতঙ্কে গোঁ গোঁ করছে, ক্রল করে ফিরে আসতে চাইছে বোল্ডারের আড়ালে।
ইনলেটের ওপার থেকে আবার দুটো গুলি হলো। ওদের শিকারের কাছ থেকে দুই ফুট দূরে লাফিয়ে উঠল বালি। আড়াল থেকে বেরোতে গিয়েও নিজেকে আটকে রাখল আজাদ। পর মুহূর্তে সদ্য রিলোড করা রাইফেল গর্জে উঠল, ওর ওপরের বোল্ডারের মাথাটা ভেঙে গুঁড়ো হয়ে গেল।
‘ধুস শালা!’ কোনো শব্দ না করে আরেকটা বোল্ডারের আড়াল লক্ষ্য করে লাফ দিল আজাদ, ওর পিঠে একরাশ পাথরকুচি পড়েছে।
মুহূর্তের জন্য ভেবেছিল, ওই বোধহয় ওদের নতুন টার্গেট। তারপর দেখল, ওদের টার্গেট অস্তিত্ব রক্ষার বেপরোয়া চেষ্টায় ক্রল করে ওর দিকে চলে আসছে আহত একটা কাছিমের মতো।
পাহাড়চূড়া থেকে আসা বুলেট লক্ষ্যভেদে খুব একটা সফল না হলেও, একটা নিয়ম ধরে ছুটে আসছে—কয়েক সেকেন্ড পর পর একটা করে। প্রশ্ন হলো, দুই বন্দুকধারীর মধ্যে কে আগে আহত সন্ন্যাসীকে খুন করবে? পরিস্থিতি দেখে বোঝা যাচ্ছে, তার বাঁচার কোনো উপায় নেই, যদি না আজাদ নিজের প্রাণের ওপর ঝুঁকি নিয়ে সাহায্য করে তাকে।
ইতিমধ্যে আজাদের জানা হয়ে গেছে, ওরা তার পেছনে লাগতে আসেনি। কাজেই ওর নাক গলাতে যাওয়ার কোনো মানে হয় না।
আমার কোনো ব্যাপার নয়, নিজেকে বোঝাল ও।
আর ঠিক তখনই চিত্কার করে উঠল আহত লোকটা।
বাংলায়। ‘উহ্, মাগো!’
*******


সংগ্রহ: প্রথম আলো সাহিত্য সাময়িকী (২৯.০১.২০১০)

No comments: