Wednesday, May 26, 2010

হ্যালো, ক্যান আই টক টু ড. ফ্রয়েড প্লিজ! - সেলিম হোসেন টিপু

'কাইল রাইত, বোদয় তিনটার দিকে, ঘোম বাইঙ্গা গেসে, চাইয়া দেহি আমি বিস্নার উপরে বইসা কান চুলকাইতেসি!' বলে বেদম হাসতে লাগল শাহেদ। এতে হাসির কী হলো, কে জানে! চুপ করে টেবিলে কনুই ঠেকিয়ে গালে হাত দিয়ে বসে তাকিয়ে রইল রোমানা। হাসিটা কেমন যেন অশ্লীল লাগছে, কেন_ তাই ভাবছে সে। নাশতার টেবিলে ওরা দু'জন দু'পাশে বসে আছে। ওর নাশতা শেষ। মানে, কিছু খেতে ইচ্ছে হয়নি বলে শুধু একটি কলা আর চা খেয়ে ফেলেছে। এখন বসে বসে স্বামীর খাওয়া দেখছে।

ইদানীং নাশতায় প্রচুর ফল থাকে। আগে বললেও 'এত দাম' দিয়ে এসব কিনত না, এখন সিজন ছাড়া আমদানি করা ফলও প্রচুর কেনে। হয়তো কোথাও দেখেছে। একেক জায়গা থেকে একেকটা শিখে এসে সেটা করা শুরু করে, অথচ রোমানা বললে করে না। একদিন হঠাৎ নিজের জন্য বেশ কয়েক জোড়া জুতা কিনে আনল, 'অহনে মাইনষে কার কেমন জোতা, সেইটাও খেয়াল করে!'... এই যুক্তিতে।
শাহেদ জানে যে, চতুর হলেও বুদ্ধিমান সে নয়। কিন্তু তাই বলে স্ত্রীর বুদ্ধি সে নেবে না। এবং এটা সে বলেও।






নিজের অবস্থানটা পরিষ্কার করার জন্য একটা সত্যি গল্প বলে : অনেক আগে তাদের গ্রামে নাকি এক লোক কাঁধে ভার, মানে লাঠির দুই প্রান্তে কুমড়ো বা তরমুজের ঝুড়ি ঝুলিয়ে হাটে নিয়ে যাচ্ছিল বেচতে। কিছুদূর যাওয়ার পর_ ধরা যাক বিশ কেজির মতো পথেই বিক্রি হয়ে গেল। তাতে করে একটা ঝুড়ি বেশি ভারী হয়ে গেল আর সেটা ব্যালান্স করতে পথের ধারের কিছু মাটি নিয়ে কিছুটা খালি হয়ে যাওয়া ঝুড়িতে ভরে সমান করে আবার সে রওনা হলো। ব্যাপার দেখে এক লোক তাকে বুদ্ধি দিল মাটি ফেলে দিয়ে ভারী ঝুড়ি থেকে কিছু পরিমাণ তরমুজ নিয়ে কমে যাওয়া ঝুড়িতে দিয়ে দিতে, এতে তার বইতে সুবিধা হবে। তাই করল লোকটা, আর বেশ আরাম পেল হালকা বোঝা বয়ে নিতে। কিছুদূর গিয়ে তার মনে হলো_ আচ্ছা, এই যে লোকটা তাকে এত সুন্দর একটা সমাধান দিল_ তার পরিচয়টা তো জানা হলো না, নিশ্চয় সে খুব জ্ঞানী। তখন সে আবার ফিরে এলো সেই লোকটির কাছে। জিজ্ঞেস করল সে কী করে, কোথায় থাকে। জবাবে লোকটা জানাল, সে একজন ভিক্ষুক, পথেই সে থাকে। শুনে তো সে মহাক্ষেপে গেল, ব্যাটা ফকির, আমাকে বুদ্ধি দেয়! এই রকম একটা লোকের বুদ্ধি ধার করতে হবে!

তখন সে আবার সেই তরমুজ আগের ঝুড়িতেই রেখে ফের সেই ফেলে দেওয়া মাটি তুলে ঝুড়িতে নিয়ে পুরো বোঝা কাঁধে নিয়ে চলল। বলতে লাগল_ 'আমার কম বুদ্ধিই বালা, তাও নিজের বুদ্ধিতে সলি, তর মতো বিক্ষা তো কইরা খাই না।'
কাল রাতে কী হয়েছিল জানে না রোমানা। ঘুম তো প্রায়ই ভাঙে। মাঝে মাঝে যখন কিছু রাত পর্যন্ত একসাথে শুতো ওরা তখনও ঘুমিয়ে যেত, আর নিজের নাক ডাকার শব্দে নিজেই জেগে উঠত ধড়মড় করে। তার বীভৎস নাক ডাকার শব্দে স্ত্রীর কষ্ট হবে সে জন্য আলাদা ঘরে শোয়_ শুনে মনে হতে পারে লোকটা কত ভালো। কিন্তু আসলে ব্যাপারটা এত সরল নয়। তবে সে আলাদা ঘরে শোয়_ এটাই হচ্ছে সার কথা।

অথচ রোমানা চেয়েছিল ওকে কোলবালিশ বানিয়ে শুয়ে থাকুক, গায়ে গা এলিয়ে বসে টিভি দেখুক, আসতে-যেতে একটু ছোঁয়াছুঁয়ি, কোনো কথা বলতে হলে দু'হাতে ওকে ধরে সেটা বলুক; কিন্তু সে রকম কিছুই হয় না। কখনও হঠাৎ ওকে চেপে ধরে একটা চুমু দেয়নি শাহেদ। মোটে দেয়ই না, তা আবার হঠাৎ!

কখনও কখনও দু'তিন মাসেও ওরা একসাথে হয় না। তারপর যদিওবা হয়, কোনোভাবে খুব মন জোগাতে পারলে তখন হয়তো হয়, কিন্তু ওই নামমাত্র মিলনের জন্যও তাকেই এগিয়ে যেতে হয় এবং সবকিছু তাকেই করতে হয়। এতটুকুর জন্যও প্রতীক্ষা করতে হয় বহু রাত-দিন। তবুও সে চায় এটা হোক, তাতে করে হয়তো আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে আসবে।
যতটুকুই হোক, তবু আমার কাছেই থাকুক_ ভাবে রোমানা। কিন্তু যতই যা করুক, সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে সে তার নিজের মতোই চলে।

এবং বিয়ের প্রথম রাত থেকেই শাহেদ নিরোধক ব্যবহার করে।
এই অবাক কাণ্ড দেখে প্রথম প্রথম খুব বিস্ময় প্রকাশ করত রোমানা, তার পর অনেক কাকুতি-মিনতি; কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। নিরোধক লুকিয়ে ফেললে সে বাইরে স্খলন করে। এখন তো ও ছুঁলেও গা ঘিনঘিন করে, তবুও একটা বাচ্চার জন্য সব রকম কদর্য আচরণ সহ্য করে রোমানা। কিন্তু হলে কী হবে সে তার সিদ্ধান্তে অনড়। এখনই সন্তান না হলে কবে হবে, কবে সে বড় হবে, তাকে মানুষ করতে হবে না! ইত্যাদি নানানটা বলেও কোনো কাজ হয়নি বরং ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করেছে, বাচ্চা হওয়াটাকে ইতর শ্রেণীর কাজ বলে আখ্যায়িত করেছে। অথচ সে যে বাচ্চা পছন্দ করে না_ তা তো নয়। ওর ভাইবোনের বাচ্চাদের সব আবদার সে-ই মেটায়, ওদের নিয়ে ঘুরতে যায়; কিন্তু নিজের বেলায় ভান করে বাচ্চা হওয়াটা একটা স্থূল ব্যাপার, রুচিহীন কাজ। শুনে হাসবে না কাঁদবে ভেবে পায় না রোমানা। তবে কাঁদে সে প্রায়ই, একা একা, গোপনে।

শাহেদ কখনও দামি রেজর ব্যবহার করে না, কারণ ওতে সে ব্লেড রিফিল করতে পারে না। সে কোনো ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে না, এমনকি কোনো এটিএম কার্ডও তার নেই, এসব নাকি তার কাছে খুবই জটিল লাগে। কম্পিউটার দূরে থাক, একটা মোবাইল ফোনও ঠিকমতো অপারেট করতে পারে না। একবার ওর ছোট বোন তার দুলাভাইকে এসএমএস করে জবাব দেখে তো অবাক! পরে জানতে পারল, সে তার মেসেজের মাথামুণ্ডু কিছুই বোঝেনি; কিন্তু একটা রিপ্লাই দিতে হয় তাই রেডিমেড হাতের কাছে যা ছিল, মোবাইল কোম্পানির বিলের নোটিশটাই ফরওয়ার্ড করে দিয়েছে। তখন সে ব্যঙ্গ করে বলল, আগে চিঠি পড়তে এবং লিখতে পারলে তাকে সাক্ষর বলত, এখন যে এসএমএস টাইপ করতে পারে না তাকে নিরক্ষর বলা হয়। 'আপনি একজন ডিগ্রিধারী অশিক্ষিত।'
এ জন্যই তো ওকে দেখতে পারে না শাহেদ, মুখরা বলে না, খারাপ করে বলে_ চোখ ফুটা মাইয়া! আসলে ও তো মেসেজ চর্চা করে না। কারও মেসেজ পেলে সাথে সাথে ফোন করে। ফোন সারাদিন কানেই থাকে। নাম গোলমাল হয়ে যায় কি-না, এ ভয়ে ডাকে_ সোনা। রোমানা সামনে পড়ে গেলে বলে_ যান, আপনে এক্ষণ যান!

দুনিয়াতে শুধু একটা কাজই বোঝে সে, খুব ভালো বোঝে, তা হচ্ছে টেন্ডার নিগোসিয়েশন। ওই করেই সে আজ কোটিপতি। এই রকম একটা মূর্খ লোক শুধু কাঁড়ি কাঁড়ি টাকার জোরে তার স্বামী হয়েছে_ এটা ভেবেও মাঝে মাঝে নিজেকে খুব ছোট মনে হয় রোমানার, কেন সে তাকে বিয়ে করল! এটা ঠিক যে, আর্থিক সচ্ছলতার বিষয়টি তাকে ভাবিয়েছিল। কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা ওকে ঠিকভাবে বুঝতে পারেনি রোমানা। বিশেষ করে ওর বন্ধুদের দেখে সে ভেবেছিল এ রকম যখন তার পরিমণ্ডল নিশ্চয়ই সেও যথেষ্ট রুচিবান। আর সেটাই হয়েছিল মহাভুল। তার ওই বন্ধুরা তাকে পুচে স্রেফ তার টাকার জন্য। কোথাও কোনো ধরনের ফালতু খরচাপাতির ব্যাপার হলেই শুধু তাকে ডাক দেয়, সাথে রাখে। এবং এখন মনে হয়, তার মাধ্যমে বিভিন্ন রকম বিনোদনও তারা নিয়ে থাকে। ও নিজেই তো একটা চিড়িয়া। তাছাড়া শহরের সব বাজে মেয়ের সাথে তার সখ্য আছে। শুধু তাই নয়, নিত্যনতুন মুখ ধরতেও সে ওস্তাদ। বড় বড় ডিপার্টমেন্ট স্টোর কিংবা শপিংমলে গেলেও রেহাই নেই, সেলস গার্লদের দেখে থেমে পড়ে আলাপ জুড়ে দেয়_ 'কোথায় পড়াশোনা করেন?' যেন ধরেই নিয়েছে ও আসলে বড় ঘরের মেয়ে, নেহাত শখ করে চাকরি করতে এসেছে। ওরাও খুশি হয়ে বানিয়ে বানিয়ে বলে, ফোন নাম্বার বিনিময় করে।

ধরা পড়লে গর্ব করে বলে, মেয়েটিই ওকে তার নাম্বার দিয়েছে। রোমানা ভেবে পায় না সে কী করে ওদের নাম্বার নিয়ে!
শুধুই রাতে কথা বলে? নাকি কোথাও ডাকলে আসে? কিন্তু তারপর? নিরিবিলি কোথাও নিয়ে হাতাহাতি? কারণ এরপর তো ব্যাপারটা আর অত সহজ হবার কথা নয়। ধরা যাক, যদি হয়ও, সে কী করতে পারবে? নিশ্চয়ই ওদের কাছেও নিজের অক্ষমতা প্রকাশ করবে না, তাই চূড়ান্ত পর্বে যাবে না। নাকি যায়? ব্যর্থতাটুকু মেনে নিয়ে ওইটুকুই এনজয় করে? নিজের বউকে যে তৃপ্ত করতে পারে না, সে ওদের সাথে কী করে!

তারপরও সহ্য করা যেত, সে যদি তাকে আদর করত, ভালোবাসত, এতটুকুও সম্মান করত। বরং উল্টোটা। পদে পদে তাচ্ছিল্য, উপেক্ষা। ও যেন কেউ না। ঈদে-পরবে ভাইবোনের বাচ্চাদের কী দেবে না দেবে, কেউ বেড়াতে আসবে কি-না, কিছুই সে জানে না। তাকে জানাবার প্রয়োজন বোধ করে না। ওদের বাড়ির লোকজনের এই বাসায় আসা বারণ। শেষবার ওদের যথেচ্ছ অপমান করে বিদায় করার পর চিরতরে বন্ধ। ওকেও যখন-তখন যার-তার সামনে কাজের বুয়ার থেকেও বেশি অপমান করেছে। তখন মনে হয়েছে সবকিছু ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা। অনেকবারই ভেবেছে রোমানা_ এক্ষুনি বেরিয়ে যাবে।
গিয়েছিলও। কিন্তু মেয়েদের পক্ষে, বিশেষ করে ওর মতো মেয়েদের জন্য বিষয়টা কঠিন। তাই চলে গিয়েও যেন বেড়াতে গিয়েছিল_ এমন ভাব করে আবার ফিরে এসেছে।

ওর বন্ধুরা তো আপাদমস্তক লম্পট। রোমানা জানত না, শাহেদই বলেছে। প্রত্যেকেই অন্য মেয়েদের দেখলে কেলায়, কথা বলার সুযোগ পেলে বলে_ তার বউয়ের সাথে সম্পর্ক ভালো না, কেউবা বলে তার সাথে থাকেই না। এসব বলে বলে ওই মেয়েদের করুণা আদায় করার চেষ্টা করে কিংবা তার সাথে সম্পর্ক করতে চাওয়াটাকে যুক্তিসঙ্গত করার চেষ্টা করে। এসব বলতে গিয়ে শাহেদ তার নিজের চরিত্রও প্রকাশ করে ফেলেছে। কিন্তু তবু তাকে বলতে হয়েছে, কারণ রোমানার ধারণা_ শাহেদ চেয়েছিল ওর বন্ধুরা যাতে রোমানার ওপর আবার কোনো চান্স নিয়ে না বসে। সে জন্যই আগে থেকে সাবধান করে দিয়েছিল ওদের সম্পর্কে একটা খারাপ ধারণা দিয়ে।
শুধু একজনকে তার একটু অন্য রকম লাগত। কথাবার্তাই আলাদা ধরনের, আঁতেল টাইপ। ওকে বাধ্য হয়েই সব বলেছিল রোমানা। কিন্তু ফ্রি হয়ে যাওয়ার পরও লোকটা তার স্ত্রী সম্পর্কে কোনো খারাপ মন্তব্য করেনি, বরং বলেছে ওরা তুমুল এনজয় করে। তবে একটু লেজ লাগিয়েছে, ফ্রিকোয়েন্সি কম, অর্থাৎ ইদানীং কম হচ্ছে, কোথাও একটু উপরি পেলে মন্দ হয় না_ ভাবখানা এমন। ভঙ্গিটা মোটামুটি গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে রোমানার, ফাউ কে না চায়!

সে বলেছে, প্রথম দেখার দিন থেকেই নাকি রোমানাকে তার ভীষণ ভালো লেগেছে। বলে, তার হাসিটা নাকি একেবারে শিশুর মতো সরল আর প্রাণখোলা। আবার বলে, হাসি তো দেখে, এবার জিদ ধরে হাত-পা ছুড়ে কান্না দেখার খুব নাকি শখ তার। শখের বাহার কত! পরের বউকে নিয়ে কতরকম শখ থাকে লোকের!

তবে এত অল্পে পটে যাওয়ার পাত্রী সে মোটেও নয়। তাছাড়া সত্যিই সে ওকে পছন্দ করে, নাকি মাগনা পেলে লোকে আলকাতরাও খায়_ সেই রকম, তা নিয়ে কিছুটা সংশয় যে ছিল না তা নয়। তবু যাহোক, মাস ছয়েক আগে একবার যখন খুব অসহ্য হয়ে পড়েছিল জীবন যাপন, শাহেদ অনেক রাত করে বাসায় ফেরে, হঠাৎ দু'একদিন ফেরেও না, কোথায় গেছে বলে না, ফোনও ধরে না, তখন ওকে ফোন করেছিল রোমানা। সাহায্য চেয়েছিল যেন সে তার বন্ধুকে ফেরায়, একটু বুঝিয়ে সুঝিয়ে ঘরমুখো করে। তাতে করেই ওকে সব বলতে হয়েছিল। বলেছিল যে গত ছ'মাস ধরে সে তার কাছে আসে না, বলেছিল প্রথম থেকেই শাহেদ নিরোধক ব্যবহার করে। ওর সাথে কথা বলতে বলতে হঠাৎ সে নিজেই একটি সত্য আবিষ্কার করে_ শাহেদ জানে, সে কোনোদিন বাবা হতে পারবে না। সে জন্যই সে নিরোধের ভান করে। চিন্তাটা ওর ভেতর প্রচণ্ড নাড়া দিয়েছিল, একটা বড় রকম ঝাঁকুনি খেয়েছিল সে।

তখন বন্ধুটি ওকে সান্ত্বনা দিয়েছিল, সব নাকি ঠিক হয়ে যাবে।আজকাল কত রকমের চিকিৎসা বের হয়েছে, একটা ব্যবস্থা হবেই।
কিন্তু রোমানা জানে, তাই যদি হয়ে থাকে তবে চিকিৎসার কোনো কিছু বাকি রাখেনি শাহেদ। যাহোক, এভাবে চলতে চলতে একদিন বাইরে বের হবার প্রস্তাব দিল সেই বন্ধুটি, মুখোমুখি বসে কথা বলতে চায়। রোমানা জানে এটা একটা ফাঁদ, কিন্তু অনেকটা প্রতিশোধের মতোই একটা ভাবনা থেকে ভেবেচিন্তে রাজি হলো রোমানা। মনে মনে বলল, দেখ, তুই বাজে মেয়েদের সাথে ঘুরিস, আমি তোর বন্ধুর সাথেই ঘুরছি!

কিন্তু এভাবে ক'দিন ঘোরার পর একদিন গাড়িতেই আদর করতে শুরু করল বন্ধুটি। অদ্ভুত এক আবেশে নিজেকে হারিয়ে ফেলল রোমানা, এভাবে কেউ তাকে আদর করেনি কোনোদিন। কিন্তু ও যে থামছে না, রোমানাও সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণহীন, বরং সাড়া দিতে লাগল জন্তুর মতো। এবং প্রচণ্ড আবেগে কাঁপতে কাঁপতে তীব্র তীক্ষষ্ট চরমানন্দে ভেসে গিয়ে অনুভব করল চূড়ান্ত তৃপ্তি।

গর্ভবতী হয়ে পড়ল রোমানা। এবং আশ্চর্য, হঠাৎ কীভাবে যেন সেটা টের পেয়ে গেল শাহেদ। তার চেয়ে উদ্ভট বিস্ময়ের ব্যাপার হলো সে রাতেই সে সম্পূর্ণ নিজের উদ্যোগে উপগত হলো, কিন্তু কোনো রকম নিরোধক ছাড়া! বলল, সে নাকি ভেবে দেখেছে এবার তাদের একটা সন্তান দরকার। কোনো রকমে শেষ করে রোমানাকে আদর করতে করতে বলল, 'এইটা ডেইনজার পিরিয়ড না? দেইখো এইবারেই অইব।' পরে নিজেই গিয়ে প্রেগন্যান্সি টেস্ট স্ট্রিপ কিনে আনল, পজিটিভ পেয়ে এমন লাফালাফি শুরু করল, বলার নয়।

কী করবে কিছুই বুঝতে পারছিল না রোমানা। ও তো ভেবেই ছিল ওটাকে নষ্ট করে দেওয়ার কথা। তাছাড়া এখন মনে হচ্ছে ওর দুর্বলতার সুযোগ নিয়েছে ওই বন্ধুটি। আর আনুষঙ্গিক আরও কারণ তো আছেই। কিন্তু শাহেদ হঠাৎ এসব কী শুরু করল! রোমানা ঠিক জানে যে শাহেদ জানে ওই বাচ্চাটা তার নয়। এমনকি কে সেই জনক তাও বোধহয় জানে।

ওর মতো ধুরন্ধর লোকের পক্ষে এটা কঠিন কিছু নয়। তা হলে কেন সে এমন আচরণ করছে ? কেন এই অতি-অভিনয়?

এখন তিন মাস পেরিয়ে গেছে। কিন্তু শাহেদ ওর সাথে এখন আর খারাপ ব্যবহার করে না। বরং ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়, পিতৃসুলভ দায়িত্ব পালন করে। এসব দেখে আরও বেশি বিস্মিত-চিন্তিত হয় রোমানা। কিছুতেই কিছু বুঝে পায় না। কেন শাহেদ এমন উচ্ছ্বাস দেখাচ্ছে, নিখাদ স্বাভাবিক আচরণ করছে? এটা কি এক ধরনের পাগলামি, কে জানে। ফ্রয়েড হয়তো বলতে পারত। খুব ইচ্ছা হয় তার সাথে একবার কথা বলতে!

-----
সূত্র: সমকাল: কালের খেয়া: ০২ এপ্রিল ২০১০

No comments: